This website uses cookies to ensure you get the best experience on our website. Learn more

পাহাড়ের চূড়ায় ২০০০ বছর বয়সী (!) বগা লেক | Boga Lake - Highest Lake in Bangladesh

x

কেওক্রাডং ভ্রমণ। বগালেক ভ্রমন। চিংড়ি ঝর্ণা। বাংলাদেশের ছাদে রাত্রী যাপন

কেওক্রাডং ভ্রমণ। বগালেক ভ্রমন। চিংড়ি ঝর্ণা। বাংলাদেশের ছাদে রাত্রী যাপন
অপার্থিব সৌন্দর্যের লীলাভুমি কেউক্রাডং। প্রায় ৩১৭২ ফুট সুউচ্চ এই পাহাড়ের চুড়াকে দীর্ঘদিন বাংলাদেশের সর্বোচ্ছ চুড়া মনে হলেও কিছু এডভেঞ্চার প্রেমী হিল ট্রেকাররা এটিকে ভুল প্রমানিত করেছেন। বেসরকারি ভাবে কেউক্রাডং উচ্চতায় বাংলাদেশে ৫ম। প্রথম সারীর প্রায় সব পাহাড়ই কেউক্রাডং এর চুড়া থেকে দেখা যায়। কেউক্রাডং এর চুড়া থেকে আপনার দেখা মিলবে সাকা হাফং, জটৎলং, দুম লং, যোগী হাফং।

কেউক্রাডং পাহাড়ের চুড়া থেকে চারপাশের সবুজের সৌন্দর্য আপনার মনকে বিমোহিত করবে। প্রতিবছর অনেক মানুষ এর সৌন্দর্য আর এডভেঞ্চারের টানে এখানে ছুটে আসে। এখানে আছে রাত্রী যাপনের জন্য লালার কটেজ, খাওয়ার জন্য লালার হোটেল। আছে ২টো হেলিপ্যাড। পুরো এক গ্রুপ এডভেঞ্চার প্রেমী বন্ধুদের সাথে চলে আসতে পারেন কেউক্রাডং এর চুড়ায়।

কেউক্রাডং আসতে হলে, ঢাকা থেকে বান্দরবনগামী বাসে উঠতে হবে। হানিফ শ্যামলি সেন্টমার্টিন পরিবহন সোদিয়া সহ সকল ভালো বাসই এই রুটে চলাচল করে। নন এসি ভাড়া ৬২০। সকাল সকাল বান্দরবন বাস স্ট্যান্ডে নামিয়ে দিবে আপনাকে।

বান্দরবন বাস স্ট্যান্ডে নেমেই সকালের নাস্তা করে নিন। এরপর অটো দিয়ে চলে আসুন রুমা বাস স্ট্যান্ড। রুমা বাস স্ট্যান্ড থেকে প্রতি ১ঘন্টা পর পর বান্দরবন থেকে রুমার উদ্দ্যেশ্যে বাস ছেড়ে যায়। বান্দরবন থেকে রুমার বাস ভাড়া নিবে ১১০টাকা। প্রায় ৩ঘন্টা লাগবে রুমা পৌছাতে। আপনি চাইলে চাদের গাড়িতে করেও বান্দরবন থেকে রুমা চলে আসতে পারেন। তবে সেই ক্ষেত্রে আপনাদের ভাড়া গুনতে হবে প্রায় ৩৫০০-৪০০০. তবে খুব আরামদায়ক ভাবে প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখতে দেখতে রুমা আসতে পারবেন। যাত্রা পথে ওয়াই জংশনে ব্রেক দিলে, সেখানে হালকা নাস্তা করে নিতে পারেন৷

বান্দরবন ভ্রমনে পাহাড়ি মানুষদের সাথে সর্বদা ভদ্র আচরন করুন৷ তাদের কষ্ট দিয়ে কথা বলবেন না। যেখানে সেখানে ময়লা আবর্জনা ফেলা থেকে বিরত থাকুন।

বাস থেকে বা চাদের গাড়ি থেকে রুমাতে নেমেই আগে একজন গাইড ঠিক করুন। গাইড ছাড়া আপনাদের কেউক্রাডং এবং বগালেকে থাকতে দেয়া হবে না। আর্মিদের রুলস এখানে খুবই কড়া। আপনাদের সেফটি দেয়ার জন্য তারা সর্বদা নিয়োজিত। আপনার যেকোন সমস্যায় কাছাকাছি আর্মিদের সাথে যোগাযোগ করুন। কেউক্রাডং এবং বগালেকে আর্মি ক্যাম্প আছে।

এবার গাইড নিয়ে রুমা বাজার ব্রিজ পার হয়ে চাদের গাড়িতে উঠুন৷ চাদের গাড়ি সেখান থেকে আপনাদের সরাসরি কেউক্রাডং নিয়ে যাবে৷ ভাড়া পড়বে প্রায় ৪০০০-৫০০০টাকার মতো। খুব শক্ত ভাবে আপনাদের দামাদামি করে নিতে হবে। মাঝপথে বগালেকে আর্মি ক্যাম্পে আপনাদের নাম রেজিষ্ট্রেশন করতে হবেন। ঘাবড়াবেন না। আপনাদের গাইডই আপনাদের সাহায্য করবে।

প্রায় দেড় ঘন্টায় আপনারা পৌছে যাবেন কেউক্রাডং। আগেই বলে রাখি কেউক্রাডং এর রাস্তা যথেষ্ট ভয়ানক, উঁচু নিচু এবং আকা বাকা রাস্তা। তাই সাবধানে শক্ত ভাবে বসুন। চাদের গাড়ির চাদে না উঠাই শ্রেয়। অনেক বিপদজনক হয়ে যায় ব্যাপারটা। আপনার ড্রাইভারকে বলুন, সাবধানে গাড়ি চালাতে।

কেউক্রাডং নেমেই লালার হোটেলে দুপুরের খাবার খেয়ে নিন। লালার কটেজে একটু রেস্টও নিয়ে নিতে পারেন। তারপর পুরো কেউক্রাডং ঘুরে বেড়ান। তবে হেলিপ্যাডের পরের অংশে না যাওয়াই ভালো। ওই পাশ বন্ধ।

কেউক্রাডং ভ্রমন শেষ করে পরের দিন বগালেকের জন্য যাত্রা শুরু করুন। আমি বলবো এই অল্প রাস্তাটা ট্রেকিং করেই পার হউন। সময় লাগবে মাত্র ১ঘন্টা। আর কেউক্রাডং থেকে শুধু নামা আর নামা। তাই অতোটা কষ্ট হবে না। ট্রেকিং এর মাঝ পথেই পাবেন চিংড়ি ঝর্না এবং চিংড়ি ঝিরি। ঝিরির পানি অনেক সুন্দর পরিষ্কার। খাওয়ার জন্য একদম উপযোগী।

চিংড়ি ঝিরিতে কিছু সময় ঘুরে ছবি তুলে বিশ্রাম নিয়েই আবার বগালেকের উদ্দেশ্য নেমে পড়ুন। কষ্ট ছাড়াই পাহাড়ি রাস্তায় আধা ঘন্টায় পৌছে যাবেন বগালেক। পাহাড়ি পথে ট্রেকিং এর সময় সাবধানে পা চালান। তাড়াতাড়ি না করে ধীরে সুস্থে নামুন।

বগালেকে এসেই সিয়াম দিদির কটেজে রাত্রে থাকার জন্য ঠিক করুন। সিয়াম দিদির হোটেলে দুপুরের খাবার খেয়েই গাইড নিয়ে বেরিয়ে পড়ুন। গাইড ছাড়া একাকী না বের হওয়াই শ্রেয়। এবার আসুন আপনাদের বগালেক নিয়ে কিছু কথা বলি,

বগালেক বাংলাদেরশের সর্বোচ্চ উচ্চতম একটি লেক। এটি ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১২০০ ফুট উপরে। এর গভীরতা ১৫০ ফুট। চারপাশে পাহাড়ে ঘেরা এই লেক কিভাবে তৈরি হলো, তা নিয়ে জনমনে বিভিন্ন রকম কথা প্রচলিত আছে। প্রকৃতিক ভাবে সৃষ্ট এই লেক নিয়ে ভু বিজ্ঞানীরা মনে করেন, প্রায় ২০০০ বছর আগে এই লেকের সৃষ্টি হয়েছে। ২০০০ বছর আগে এইখানে জলন্ত লাভা মুখ ছিলো। পরে লাভ ঠান্ডা হয়ে গেলে পাহাড়ী ঢল আর বৃষ্টিতে এই লেকের সৃষ্টি। আর তাই এই লেকের পানি হিমশীতল ঠান্ডা। বছরের একটি নির্দিষ্ট সময় এই লেকের পানি লাল হয়ে যায়। আমরা খুব ভাগ্যবান ছিলাম বলেই হয়তো, এই লাল পানির দেখা পেয়েছি। এমনিতে বগালেকের পানি অনেক সচ্ছ এবং পরিষ্কার। বগালেকের পানি আশে পাশের বম উপজাতির মানুষরা খাওয়ার জন্য এবং অন্যান্য দরকারে ব্যাবহার করে।

বগালেক কে পাহাড়িরা ড্রাগন লেক নামেও ডাকে। তাদের মতে, অনেক বছর আগে এই জায়গায় এক ড্রাগন ছিলো। সেই এই লেকের সৃষ্টি করে এবং পরে এখানে ঢুকে যায়। তারপর সেই ড্রাগন আর কখনো ফিরে আসেনি। বছরের একসময় পানি লাল হয়ে যাওয়াটা তাদের মতে, ড্রাগনের লেজ লাড়িয়ে দেয়ার ফলেই হয়৷ যদিও বিজ্ঞানীরা এই কথা সম্পুর্ন রুপে উড়িয়ে দিয়েছেন।

বগালেকে নতুন করে বসার জন্য একটি পার্ক হয়েছে। বিকেলে চাইলেই সেখানে বসতে পারেন। এখানে বসে পুরো বগালেকের ভিউ পাবেন। এখানে বসে পাহাড়ের মাঝে সুর্যাস্ত দেখার অনুভুতিটাই অন্যরকম।

সন্ধ্যা নামলেই বগালেকে আপনারা বার বি কিউ করতে পারেন। তবে বার বি কিউ করতে চাইলে আগেই গাইডকে বলে রাখুন। গাইডই সব কিছু ম্যানেজ করে দিবে। বগালেকে ঘুরুন, ছবি তুলুন। তবে চেষ্টা করুন চিল্লা চিল্লি না করতে। এমন কিছু করবেন না, যাতে পাহাড়িদের সমস্যা হয়।
x

Shares

x

Check Also

x

Menu